শুকনো চালের গুঁড়া দিয়ে চিতই পিঠা রেসিপি, সহজ মজাদার ঘরোয়া স্বাদ

বাংলার শীত মানেই পিঠা-পুলির মৌসুম। মিষ্টি গুড়ের সুবাসে ভরে যায় গ্রাম-গঞ্জ, শহরের অলিগলি। শুধু চিতই পিঠা রেসিপি। সেই ঐতিহ্যের সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় একটি নাম চিতই পিঠা। বাড়ির আঙিনায় ধোঁয়া ওঠা চুলায় যখন পাতলা গোলা ঢেলে তৈরি হয় গোলগাল সাদা চিতই, তখন যেন শীতের সকালটা সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে।
বর্তমান ব্যস্ত শহুরে জীবনে আগের মতো ভিজিয়ে চাল বেটে গুঁড়া তৈরি করার সময় অনেকেরই মেলে না। তাই অনেকে বাজার থেকে শুকনো চালের গুঁড়া কিনে নিয়ে চেষ্টা করেন পিঠা বানাতে। কিন্তু একথা অনেকেই বলেন শুকনো চালের গুঁড়ায় পিঠা ঠিকমতো ফুলে না।
তবে চিন্তার কিছু নেই। সঠিক পদ্ধতি জানলে শুকনো চালের গুঁড়াতেও আপনি একদম ফুলে ওঠা নরম ও সুস্বাদু চিতই পিঠা তৈরি করতে পারবেন।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে খুব সহজে ঘরেই তৈরি করবেন শুকনো চালের গুঁড়া দিয়ে চিতই পিঠা রেসিপি এই শীতের প্রিয় পিঠা।
উপকরণ
চিতই পিঠা তৈরিতে খুব বেশি উপকরণের প্রয়োজন হয় না। নিচের সামান্য জিনিসগুলো থাকলেই তৈরি করতে পারবেন নিখুঁত চিতই পিঠা:
- শুকনো চালের গুঁড়া – ১ কাপ
- ভাত (সেদ্ধ) – এক মুঠো
- হালকা গরম পানি – প্রায় ১ কাপ (প্রয়োজন অনুযায়ী)
- লবণ – স্বাদমতো
আরো পড়ুনঃ এক মাস ধরে প্রতিদিন চিনি খেলে শরীরে কী ঘটে?
মিশ্রণ তৈরির পদ্ধতি
- প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্রে শুকনো চালের গুঁড়া নিন।
- তাতে অল্প অল্প করে হালকা গরম পানি দিন এবং নরম মণ্ডের মতো তৈরি করুন।
- এই মিশ্রণটি ১০-১৫ মিনিট ঢেকে রেখে দিন, যাতে গুঁড়াটা একটু ফুলে আসে।
- এবার ব্লেন্ডারে সেই মিশ্রণটি দিন, সাথে যোগ করুন এক মুঠো সেদ্ধ ভাত।
- ভাত দেওয়ার কারণ হলো, এটি পিঠাকে নরম ও ফ্লাফি করে তোলে।
- ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন, যাতে কোনো দানা না থাকে।
- শেষে স্বাদমতো লবণ দিয়ে আবারও নেড়ে নিন।
টিপস:
গোলা যেন না হয় খুব ঘন, আবার একেবারে পাতলাও নয়। ঢাললে সহজে ছড়িয়ে যাবে এমন একটি মাঝারি ঘনত্বই সবচেয়ে উপযুক্ত।
পিঠা বানানোর প্রস্তুতি
চিতই পিঠা বানাতে বিশেষ খোলা (চিতই খোলা) ব্যবহার করা হয়। যদি সেটি না থাকে, তাহলে ননস্টিক প্যান বা ছোট কড়াই দিয়েও করা যায়।
খোলাটি মাঝারি আঁচে গরম করুন।
গরম হলে একটি ভেজা সুতির কাপড় দিয়ে খোলার পৃষ্ঠটা মুছে নিন। এতে পিঠা আটকে যাবে না।
এবার পিঠার গোলা ভালোভাবে নাড়িয়ে নিন, কারণ নিচে বসে যেতে পারে।
পিঠা তৈরি করার ধাপ
- খোলা যথেষ্ট গরম হলে এক চামচ পরিমাণ গোলা ঢালুন।
- ঢালার পর চামচের পেছন দিয়ে সামান্য ঘুরিয়ে ছড়িয়ে দিন, যাতে এটি পাতলা গোল আকার ধারণ করে।
- সাথে সাথে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন এবং ২-৩ মিনিটের মতো অপেক্ষা করুন।
- পিঠা সেদ্ধ হয়ে গেলে নিজের থেকেই খোলার পৃষ্ঠ থেকে আলগা হয়ে যাবে।
- চামচের সাহায্যে আলতো করে তুলে নিন এবং একটি প্লেটে রাখুন।
এইভাবে একে একে সব পিঠা বানিয়ে ফেলুন।
পরিবেশন প্রণালী
চিতই পিঠা পরিবেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি উপায় হলো:
মিষ্টি চিতই পিঠা:
গুড় বা নারকেল কোরা দিয়ে পরিবেশন করুন।
অনেকেই হালকা নারকেল দুধ বা খেজুরের গুড়ের সিরা গরম করে এর সাথে দেন, এতে স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন কাঁচা রসুন খেলে শরীরে কি কি পরিবর্তন ঘটে, ৩০ দিনের অভিজ্ঞতা
নোনতা চিতই পিঠা:
পেঁয়াজ, মরিচ, ধনেপাতা, আলু বা ডিম ভাজির সাথে খেতে পারেন।
চাইলে সামান্য নারকেল চাটনি বা টক চাটনির সাথেও পরিবেশন করা যায়।
কিছু দরকারি টিপস
খোলায় গোলা ঢালার আগে প্রতিবার হালকা করে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এতে পিঠা ফাটবে না।
বেশি আঁচে না বানানোই ভালো। এতে নিচের দিকটা পুড়ে যেতে পারে।
গোলা অনেকক্ষণ রেখে দিলে পিঠা শক্ত হয়ে যায়। তাই যতটুকু দরকার ততটাই তৈরি করুন।
চাইলে চালের গুঁড়ার সাথে অল্প পরিমাণ আতপ চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন — এতে পিঠা আরও নরম হবে।
ঐতিহ্য ও অনুভূতি
চিতই পিঠা শুধু একটি খাবার নয়, এটি বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ। শীতের সকাল মানেই বুড়ো আঙুলে ধোঁয়া ওঠা পিঠা হাতে বসে থাকা দাদি বা মা’য়ের হাসিমাখা মুখ। আজকের প্রজন্ম হয়তো ব্যস্ত জীবনের কারণে আগের মতো নিয়মিত পিঠা বানাতে পারে না, কিন্তু শুকনো চালের গুঁড়ার মতো সহজ উপকরণ দিয়েও সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
চিতই পিঠার আসল সৌন্দর্য তার সরলতায়। কোনো জটিল উপকরণ নেই, নেই ঘন্টার পর ঘন্টা প্রস্তুতি
শুধু কিছুটা সময়, সামান্য মনোযোগ আর পরিবারকে একসাথে বসানোর আনন্দই এর বড় উপাদান।
আমাদের শেষ কথা – চিতই পিঠা রেসিপি
শুকনো চালের গুঁড়া দিয়ে চিতই পিঠা তৈরি করা একেবারেই কঠিন নয়। যদি সঠিক অনুপাত ও ধাপগুলো অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি ঘরেই পেয়ে যাবেন ঠিক সেই ঐতিহ্যবাহী স্বাদ যা একসময় গ্রামের চুলা থেকে ভেসে আসত।
চাইলে গুড়ের সিরা বা নারকেল দুধের সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন দেখবেন এক নিমিষে হারিয়ে যাবে শীতের ক্লান্তি। এই সহজ রেসিপি আপনাকে শুধু সুস্বাদু পিঠা উপহার দেবে না, ফিরিয়ে দেবে বাঙালির শেকড় ছোঁয়া শীতের উষ্ণতা।
আরো পড়ুনঃ কিডনি সুস্থ রাখার জন্য ৩টি প্রাকৃতিক পানীয়



