ব্যবসা

অল্প পুঁজি দিয়ে সেরা লাভজনক দুইটি ব্যবসা

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৫০ লাখ। কিন্তু এই বিপুল জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৯% মানুষ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বাকি ৯১% মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০% মানুষ ভাবে, তারা একদিন একটা ব্যবসা করবে। কিন্তু সমাজ, বাস্তবতা, আর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা সেটা করতে পারে না।

একজন বিখ্যাত মনীষী একবার বলেছিলেন—
“ব্যবসা হচ্ছে সাঁতার শেখার মতো। আপনি যতক্ষণ নদীতে নামবেন না, ততক্ষণ সাঁতার শিখতে পারবেন না।”
ঠিক তেমনি, আপনি যতক্ষণ ব্যবসায় নামবেন না, ততক্ষণ ব্যবসা শেখাও সম্ভব নয়।

এই পৃথিবীর প্রতিটি ব্যবসার একটা নিজস্ব ভাষা আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সেই ভাষা বুঝতে না পারবেন, ততক্ষণ সফল ব্যবসায়ী হওয়া কঠিন। একজন বড় ব্যবসায়ী চাইলে ছোট একটা ব্যবসাকেও বড় করে তুলতে পারেন। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ, যে ব্যবসা বোঝে না, তাকে যদি যত বই ব্যবসার মালিক বানানো হয় তবুও সেই ব্যবসা টিকবে না।

তাই ব্যবসার ভাষা বোঝা খুবই জরুরি।

ব্যবসার ভাষা বোঝা মানে কী?

ব্যবসার ভাষা মানে হলো বাজারের চাহিদা, গ্রাহকের মনোভাব, এবং পণ্যের মূল্যের ভারসাম্য বোঝা। এই বিষয়গুলো বোঝা গেলে আপনি যেকোনো ব্যবসায় সফল হতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ অনলাইন ইনকাম করার উপায় – অনলাইন ব্যবসা

এখন আমি বলব এমন দুটো ব্যবসা সম্পর্কে, যেগুলোকে অনেকে “সোনার ডিম পাড়া হাঁস” বলে। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই দুইটা ব্যবসা বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ও সম্ভাবনাময়।

প্রথম ব্যবসা: কসমেটিকস ও বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবসা

চলুন একটা উদাহরণ দেখি।
বিয়ে, গায়ে হলুদ বা ঈদের মতো অনুষ্ঠানে মেয়েরা যে মেহেদি ব্যবহার করে, সেটি দোকানে বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। অথচ দোকানদাররা এই মেহেদিগুলো পাইকারি কিনে আনেন মাত্র ১১ থেকে ১২ টাকায়!

আর যারা এই মেহেদি তৈরি করেন মানে কোম্পানি বা কারখানার মালিকরা তারা ডিলারের কাছে বিক্রি করেন ৭ থেকে ৮ টাকায়। এরপর ডিলাররা সেটি দোকানদারের কাছে ১১-১২ টাকায় বিক্রি করেন। এখন ভাবুন, ১২ টাকার একটা পণ্য ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে লাভ কতটা বিশাল।

একইভাবে ধরুন একটা পারফিউম। দোকানে যার খুচরা দাম ৫০০ টাকা, সেটির পাইকারি দাম মাত্র ১৩৫ টাকা।

কেন এই ব্যবসা এত লাভজনক?

বর্তমানে টিকটক, ফেসবুক ও ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে তরুণ-তরুণীরা আরও আকর্ষণীয় হতে চায়। ফলে বিউটি ও কসমেটিকস প্রোডাক্টের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

গবেষণা বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের কসমেটিকসের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৫০০%, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭,২০০ কোটি টাকা।

শহরে এমন মেয়ে পাওয়া দুষ্কর যারা কসমেটিকস ব্যবহার করে না। অনেকেই মাসে ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করে শুধুমাত্র বিউটি প্রোডাক্টের পেছনে।

পাইকারি বনাম খুচরা দাম

নাইট ক্রিমের কথা ধরুন।
বাজারে একটি নাইট ক্রিম বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। কিন্তু সেই পণ্যটি পাইকারিভাবে কেনা যায় মাত্র ৯০ থেকে ১১০ টাকায়।

ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
যার গায়ে এমআরপি লেখা ৪৫০ টাকা, সেটি দোকানদার পাইকারি কেনেন মাত্র ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়।

এই কারণেই বলা হয় কসমেটিকস ব্যবসা বিশ্বের অন্যতম লাভজনক ব্যবসা।

কসমেটিকস ব্যবসা শুরু করার উপযুক্ত পদ্ধতি

এই ব্যবসা আপনি চাইলে অনলাইন বা অফলাইন, দুইভাবেই শুরু করতে পারেন। অনলাইনে শুরু করলে দোকান ভাড়ার খরচ লাগে না, বরং আপনি অফার দিয়ে বেশি বিক্রি করতে পারেন।

প্রাথমিকভাবে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকায় এই ব্যবসা শুরু করা যায়। তবে ব্যবসা শুরু করার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:

  • ব্যবসার পরিকল্পনা করা
  • বাজার বিশ্লেষণ
  • প্রতিযোগিতা বোঝা
  • টার্গেট গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে ধারণা থাকা

সবচেয়ে বড় কথা কাস্টমারের বিশ্বাস অর্জন করা।
কারণ বর্তমানে বাজারে নকল কসমেটিকস পণ্যের পরিমাণ বেড়েছে। গ্রাহক চায় আসল পণ্য, এমনকি একটু বেশি দাম দিয়েও।

আরো পড়ুনঃ বিকাশের রেকর্ড মুনাফা নয় মাসে ৫০৪ কোটি টাকা – বেড়েছে আয়ও

দ্বিতীয় ব্যবসা: ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা

এই ব্যবসাটিও খুব লাভজনক। অনেকেই ভাবে তারা জানে, কিন্তু আসলে এই ব্যবসার অনেক “চালাকি” আছে যা সবাই বুঝে না।

উদাহরণস্বরূপ একটা ছোট ইলেকট্রিক টেস্টার বাজারে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকায়। কিন্তু দোকানদাররা সেটি পাইকারি কেনেন মাত্র ৭-৮ টাকায়।
একটা মাল্টিপ্লাগ খুচরা বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, কিন্তু দোকানদাররা সেটা কেনেন মাত্র ৯০-১১০ টাকায়।

একটা তারের দাম দোকানে ২০-২৫ টাকা হলেও পাইকারিতে সেটি ৪ টাকায় কেনা যায়!
অর্থাৎ কসমেটিকসের মতো এখানেও লাভের পরিমাণ অনেক বেশি।

কেন ইলেকট্রনিক ব্যবসার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল

বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। মানুষ এখন বড় বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস তৈরি করছে যেখানে নিয়মিত নতুন ইলেকট্রিক পণ্যের প্রয়োজন হয়।

এই পণ্যের ভালো দিক হলো, সহজে নষ্ট হয় না। আর যদি নষ্ট হয়ও, অনেক কোম্পানি রিপ্লেসমেন্ট দেয়।

ছোট পরিসরে ইলেকট্রনিক ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা পুঁজি যথেষ্ট। আর বড় দোকানের জন্য লাগে প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা।
বেশিরভাগ দোকানদার গড়ে মাসে ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন—লোকেশন ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।

ব্যবসায় সাফল্যের মূল কথা

যে কোনো ব্যবসা শুরু করার আগে সময় নিয়ে শিখে নিতে হবে। প্রয়োজনে কয়েক মাস কোনো দোকানে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করা ভালো। এতে আপনি বুঝতে পারবেন বাজারে কী বিক্রি হয়, কীভাবে লেনদেন চলে, আর কোথায় লাভ-ক্ষতি হয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধারাবাহিকতা ও সতর্কতা।
যে ব্যবসায়ী নিয়মিত শেখে, পরিকল্পনা করে, ও গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক রাখে, তার সাফল্য অবধারিত।

আমাদের শেষ কথা – অল্প পুঁজি দিয়ে সেরা লাভজনক দুইটি ব্যবসা

প্রত্যেকটা ব্যবসারই একটা ভাষা আছে। সেই ভাষা বোঝাই সফলতার চাবিকাঠি। চোখ বন্ধ করে কারো অনুকরণ নয়বরং বাজার বুঝে, ছোট পরিসরে শুরু করুন।

মনে রাখবেন, ব্যবসা যেমন লাভের সুযোগ দেয়, তেমনি ঝুঁকিও আছে। তাই ঝুঁকিকে ভয় না পেয়ে, পরিকল্পনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এগিয়ে যান।

সানপোস্ট বিডি/টুএন্ডটাইম

আরো পড়ুনঃ বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের নতুন তৃতীয় ইউনিটে বিনিয়োগ বাড়াল ৯৮০ কোটি টাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button